ঢাকা সিটি কর্পোরেসন বিকেন্দ্রিকরন, বুদ্ধিজীবিদের নির্ভেজাল বুদ্ধি বিতরন, বি,এন,পির আন্দোনল ও আজকের হরতাল।

শাজু-গোপালঃ সর্বপ্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি প্রিয় পাঠকদের কাছে। আমার লেখায় যদি কারো বিরুদ্ধে কিছু বেশি লেখা হয়ে যায়।
আমি কোনো বুদ্ধিজিবী নই। টেলিভিশনে বুদ্ধিজিবীদের বুদ্ধি বর্ষনে সিক্ত হয়ে নিজেকে ও ‘বুদ্ধিমান’ ভাবতে শুরু করেছি। ৮৬’ থেকে ৯২ পর্যন্ত রাজপথের উত্তাল সেই দিনগুলিতে ও অনেক বুদ্ধিজিবী দেখেছি। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বুদ্ধির ও পরিবর্তন ঘটে, এটা শুধুই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই পরিলক্ষিত হয়। হবে না কেন। বাঙ্গালী আর বাংলাদেশী জাতীয়তা বিতর্কের অবসান ঘটেছে এই ক’দিন হল। দ্বিধা-বিভক্ত জাতিকে এক রাখার গোজামিল সমাধান। তবু ও ভালো, সমাধান তো হল।

আসছি ‘ঢাকা বিভক্তি’ নিয়ে। ঢাকা কি বিভক্ত হয়েছে? নাকি প্রশাসন (সিটি কর্পোরেশন) বিভক্তি হয়েছে?
আমাদের বুদ্ধিজিবীরা তো রিতিমত ঢাকা বিভক্তি বলে চালিয়ে যাচ্ছে, যা একদম মেনে নেওয়া যায় না। কেউ কেউ বলছেনঃ ১। সাংবিধানিক জটিলতা – রাজধানির নাম উত্তর না দক্ষিন হবে? আবার কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে। ২। বাংলাদেশ দুই ভাগ করে দেন – দুই প্রধান মন্ত্রী বানিয়ে দেন ….. ইত্যাদি ইত্যাদি। এদেরকে আমি কি বলবো? গ্রামের একটি প্রবাদঃ আম বাগান দিয়ে খোদার হাট…..। যেতে পারলে হয়, কোন পথে কিভাবে যাবেন সেটি বড় কথা নয়, যেতে পারলেই হল….।
একটি গল্প বলি, এক লোক কোনো দিন দাওয়াত খেয়ে সুনাম করে না, কোথাও না কোথাও একটা খুত ধরবেই। তো এক জন সাহস করে তাকে দাওয়াত করলো এবং যথেষ্ট খাওয়ালো। খাওয়া দাওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেশ করলো, কেমন খাইলেন? লোকট উত্তর দিল, সব ই টিক আছে, তয় এতো ভালো ও ভালো না। আওয়ামীলিগ যত ভালো কাজি করুক ………… এতো ভালোও ভালো না…….এর মত?
ডি,সি,সি বিভক্তিতে বি,এন,পিরআন্দোলনের যুক্তিকে আমি সম্পুর্ন রাজনৈতিক ভাবেই দেখছি। এবং এতে ঢাকার দেড় কোটি অধিবাসীর কোনো সমর্থন নাই। তা না হলে আজকের হরতালে বি,এন,পির অল্পসঙ্খক হরতালবাজ/দাঙ্গাবাজ কর্মি ছাড়া আর কেউ রাজপথে নেমে আসে নাই। তথা কথিত বুদ্ধিজিবীরাও না। দেড় কোটি নগরবাসীর পক্ষ থেকে কিছু অরাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও কি মাঠে নামার মত ছিলো না? সেই অর্থে এটাকে সুধুমাত্র রাজনিতির মাট গরম করা ছাড়া আর কিছুই না। ঘোলা পানিতে মৎস শিকার।
১৯টি জেলা থেকে ৬৪টি জেলা হয়েছে। ৪টি বিভাগ থেকে ৭টি বিভাগ হয়েছে। নতুন সিটি কর্পোরেশন হয়েছে কয়েকটি, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ এবং আরো কয়েকটি হয়ার পথে। বুদ্ধিজিবীরা সংজুক্তিতে নিরব আর বিভক্তিতে সরব, এরও কারন জানতে হবে। জাতীয়তাবাদির ভুত মাথায় নিয়ে বুদ্ধি বিতরনে লাভবান হওয়ার নিমিত্তে নামা, তথাকথিত বুদ্ধিজিবীরা সাবধান। সময়ের পরিবর্তনে আপনাদের বুদ্ধিরও যেন পরিবর্তন না ঘটে।
প্রিয় পাঠক, এ বিষয়টি এ সপ্তহের আলোচিত বিষয়। আমি বেশ কয়েকজনের কলাম লেখা পড়েছি। বিডি নিউজ ২৪ এ বিশিষ্ট লাল গোলাপ সম্পাদক তো আগামি বছরে কি হবে তা নিয়ে রিতিমত নাটক ও লিখে ফেলেছে। ওনাকে আমার বলার কিছুই নাই, কারন উনার বাসায় বিপদে পড়ে ম্যাডাম দু একদিন থেকেছিলেন। তা ওনার একটা দায়িত্য আছে না।
ঠিক তার নিচে ই প্রকাশিত হয়েছে মুজতবা হাকিম প্লেটো এর লেখাটি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই যথার্থ যুক্তিযুক্ত। আর যা কিছু সব নোংরা রাজনিতির বহিঃপ্রকাশ। প্রিয় পাঠকদের জন্য লেখাটি নিবেদন করলাম।
_________________________________________________________________
ঢাকা ভাগের বিভ্রান্তি
ডিসেম্বর ৩, ২০১১
মুজতবা হাকিম প্লেটোমুজতবা হাকিম প্লেটো
বর্তমান ঢাকা সিটি কর্পোরেশন- ডিসিসি ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দু’টি সিটি কর্পোরেশন করায় প্রবল হৈচৈ শুরু হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) সংশোধন বিল পাস হয়।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতোমধ্যে এর প্রতিবাদে হরতাল ডেকেছে। বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকা আদালতে ঠুকে দিয়েছেন মামলা । আদালত সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ডিসিসি ভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনেক কলামও লেখা হচ্ছে। একটি দৈনিকে শেখ হাসিনাকে ‘উন্মাদ’ বলে তার প্রধানমন্ত্রীত্ব খারিজ করার আহ্বান জানিয়েছেন এক কলাম লেখক! বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের একজন ড. কামাল হোসেন খোকার মামলার শুনানির মন্তব্যে- এই বিভাজন ‘সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদকে আঘাত করেছে’ বলে খবর বেরিয়েছে!
সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিকদের বলেছেন, “সংবিধান অনুসারে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এভাবে ভাগ করার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না।” খোকার আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস সবুজ বলেছেন, “বাংলাদেশের রাজধানী আইন দ্বারা নির্ধারিত। সাধারণ আইন দ্বারা এর পরিবর্তন করা যায় না। এজন্য আগে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।”
মামলার শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, “সংবিধান বলছে না- উত্তর বা দক্ষিণ ঢাকা রাজধানী হবে। সংবিধান বলছে, ঢাকা রাজধানী হবে।”
বিরোধিতাকারীদের বক্তব্যের মূল কথা- সংবিধানে উল্লেখিত রাজধানী ঢাকাকে অসংবিধানিকভাবে বিভক্ত করেছে সরকার।
সপ্তম শতক থেকেই ঢাকার অস্তিত্ব। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর নামে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ঢাকা। বিরোধীদের প্রচারে মনে হচ্ছে, দেশের রাজধানী ঢাকাকেই বুঝি সরকার দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলেছে। নগরবাসীও তাই বিচলিত। কিন্তু ‘রাজধানী ঢাকা’ আর ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশন-ডিসিসি’ এক বিষয় কি না সেটি ঘোলা হয়ে গেছে বড় বড় সংবিধান বিশারদদের হৈচৈ-এ।
ঢাকার পৌর ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৮৬৪ সালের পহেলা অগাস্ট ঢাকা পৌর কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলা পৌর উন্নয়ন আইন অনুযায়ী গঠিত হয় ঢাকা পৌর কমিটি। ১৮৮৪ সালে আইন পরিবর্তন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হয়। ১৯৬০ সালে অর্ডিন্যান্স জারী করে এই পৌরসভার আগের সব আইন বাতিল করা হয়। বাতিল হয়ে যায় নির্বাচন পদ্ধতিও। পৌর চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা চলে যায় সরকারের হাতে। শহরকে ২৫টি ইউনিয়নে ভাগ করা হয়। পরে ’৬৪ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩০টি। স্বাধীন বাংলাদেশে একে পঞ্চাশটি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। ১৯৭৭ সালে পৌরসভা অর্ডিন্যান্স জারী করে সে বছরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ‘প্রজাতন্ত্র’ অংশের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “১. প্রজাতন্ত্রের রাজধানী হবে ঢাকা ২. রাজধানীর সীমানা আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হবে।”
পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী ড. কামাল হোসেন শুনানিতে বলেছেন, ডিসিসি ভাগের জন্য সম্প্রতি পাশ হওয়া বিলটি এই ধারাকে আঘাত করেছে। লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, সংবিধানে রাজধানীর নাম বলা হয়েছে ‘ঢাকা’। এই ঢাকা ‘জেলা ঢাকা’ নাকি ‘শহর ঢাকা’? এমন কোনো মন্তব্য নেই। বলা আছে- আইন দিয়ে এর সীমানা ঠিক করা হবে। তবে, এমন কোনো সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা নেই।
আভিধানিকভাবে রাজধানী বলতে শহরকে ধরে নিলেও প্রশ্ন আসে ‘শহর’ আর ‘সিটি কর্পোরেশন’ এলাকা এক বিষয় কিনা? তথ্যের দিকে তাকালে সেটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
প্রথমত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা মর্যাদা পাবার সময় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ছিল না। ১৯৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভার নাম পাল্টে করা হয় ঢাকা পৌর কর্পোরেশন। এমনকি মিরপুর ও গুলশান ঢাকা পৌর এলাকার বাইরে দু’টি আলাদা পৌরসভা ছিল। তবে তখনও এসব এলাকা রাজধানীর অংশই ছিল। ’৭৮ সালেই ওই দু’টি পৌরসভাকে ঢাকা পৌর কর্পোরেশনে একীভূত করা হয়। আজকের ডিসিসি ভাগকে যারা ‘অসাংবিধানিক’ বলতে চাইছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন- ’৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভার আওতা বাড়িয়ে মিরপুর ও গুলশানকে একীভূত করে ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশন’ করাও কি তাহলে অসাংবিধানিক ছিলো?
আজ যারা এসব বলছেন সেদিনও তারা বহাল তবিয়তে ছিলেন। কিন্তু এই প্রশ্ন তখন তোলেন নি। কারণ বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ‘রাজধানী’ প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তথ্যে। পঞ্চাশের দশকে ৮২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছিলো ঢাকা শহরের পরিকল্পনা। আর ’৯৫ সালে ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রাজধানী শহরের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজউক। ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাব) ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার উত্তরে গাজীপুর পৌরসভা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী, পশ্চিমে বংশী-ধলেশ্বরী আর পূবে শীতলক্ষ্যা নদী। এর সঙ্গে কোনো মিল নেই ডিসিসি এলাকার।
১৯৯০ সালে ‘ঢাকা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন’র নাম বদলে রাখা হয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে সিটি কর্পোরেশনের আয়তন বর্তমানে ৩৬০ বর্গকিলোমিটার। এমন কি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বের এলাকাটিও ডিসিসির আয়তনের চাইতে বড়।
তার মানে রাজধানী ঢাকা, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন প্রতিটি বিষয়ই স্বতন্ত্র প্রসঙ্গ।
সংবিধানে উল্লেখিত ‘একটি আইনের দ্বারা রাজধানীর সীমা’ নির্ধারিত থাক বা না থাক, দিন দিন শহর বেড়েই চলেছে। এখন ঢাকা বলতে যা বোঝায়, ’৭২ সালে সংবিধান গৃহিত হওয়ার সময় এর অনেক এলাকাই শহর হিসেবে পরিচিত ছিলো না।
তবে কি এই বর্ধিত শহর রাজধানী নয়? বা ’৭৮ এর আগে মিরপুর ও গুলশান পৌর এলাকা রাজধানীর অংশ ছিল না?
সরকার বলছে, তারা ডিসিসি ভাগ করেছে আর বিরোধীরা বলছে, সরকার রাজধানী ভাগ করেছে। ঘোলা জলে একটা হরতালও ডাকা হয়েছে। ডিসিসি ভেঙে দুটো করা নাগরিক সেবা বাড়ানোর জন্য সুবিধাজনক কি না সে আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু রাজধানী ভাঙার ধুয়ো তুলে যে জনদুর্ভোগ চাপানো হলো তার কি কোনো হেতু আছে?
Share on Google Plus

About Gopalganj Sangbad

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments:

Post a Comment